খদ্দেরের তালিকায় ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট
মাদাম ক্লদ। নিজেকে কাশ্মীরি দামি শালে আবৃত রাখা, মণিমুক্তাখচিত, মসৃণ কথোপকথনে পারদর্শী। তিনি সরদারনী ছিলেন তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের বিখ্যাত ও দীর্ঘসময়ে দায়িত্বে থাকা পতিতালয় পরিচালক। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৭ সালে প্যারিসের ১৮ র্যু দ্য মারিনানে তার পতিতালয়ে ভিড় লেগে থাকতো সমাজের ধনী, বিখ্যাত-কুখ্যাত ও উঁচু স্তরের মানুষজনের। বিশ্বখ্যাত ভ্যানিটি ম্যাগাজিনে জীবনীকার উইলিয়াম স্ট্যাডিয়েমের একটি লেখায় মাদাম ক্লদের যেসব খদ্দেরের কথা উঠে এসেছে, সে তালিকায় কেবল রাষ্ট্রদূত, প্রেসিডেন্ট, ডিউক, লর্ড, মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ্র নামই উল্লেখ করা হয়নি, একই সাথে এসেছে অভিনেতা রেক্স হ্যারিসন, মারলন ব্রান্ডো, ফোর্ড মোটরসের হেনরি ফোর্ড, ব্যাংকার এলি দ্য রথচাইল্ড, লর্ড মাউন্টব্যাটন, ফিয়াট কারের প্রধান গিয়ান্নি অ্যাগনেল্লি ও জন এফ কেনেডি’র মতো বিখ্যাত মানুষের নাম! তারা সকলেই সুন্দরী ও আবেদনময়ীর খোঁজ করতেন। এই তালিকায় ছিলেন তৎকালীন ইরানের শাহ্! প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে বেশ কয়েকজন নারীকে রাজকীয় বিমানে করে সেই দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতো। খদ্দেরের তালিকায় ছিলেন লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা মোশে দায়ান। এরকম নাম এসেছে আরও অনেক বিখ্যাত লোকের। তারা কী চাইতেন, কীভাবে চাইতেন, সবকিছু বিস্তারিত উঠে এসেছে সেই লেখায়। কথিত আছে ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ থামাতে প্যারিসে যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছিল, তখন আলোচকদের নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে সিআইএ এই ক্লদের কাছ থেকে পতিতা ভাড়া নিয়েছিল। মূল্য কেমন ছিল? এক বিকালের জন্য খদ্দেরদের মূল্য চুকাতে হতো ২০০
ইউরো, সন্ধ্যা হলে তা বেড়ে দাঁড়াতো ৪০০ ইউরো। সারা দিনের জন্য হলে খরচ পড়তো ৬৬৬ ইউরো। মাদাম ক্লদ সংগ্রহে এমন পতিতার সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০-এর মতো। তাদের কাছ থেকে ক্লদ রেখে দিতেন মোট আয়ের ৩০ শতাংশ। পতিতাদের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের পরিচয়টাও বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা ছিলেন লম্বা, আকর্ষণীয়, সুন্দরী, দক্ষ ও যৌনাবেদনময়ী। এদের কেউ পার্ট-টাইম অভিনেত্রী, কেউ ক্যাটওয়াক মডেল, কেউ বা মধ্যবিত্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুন্দরী তরুণী। এরা অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের তরুণী। এদের একজন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, একজন ফ্রেঞ্চ এয়ার মার্শালের মেয়ে আর কিছু বিবাহিত মহিলা। ক্লদ পতিতা বেছে নিতেন নিজস্ব কৌশলে।
যেমন প্রতিমাসে তার কাছে ২০ জনের মতো নতুন মেয়ে পাঠাতো এজেন্টরা, তার মার্কা তিনি বেছে নিতেন একজন। বেছে নেয়ার প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। তাদের শিক্ষা, সাধারণ জ্ঞান সমপর্কীয় অনেক প্রশ্ন করতেন আগ্রহী মেয়েদের। যেমন, তিনি জিজ্ঞেস করতেন, পানির রাসায়নিক সমীকরণ কী? পঞ্চম লুইসের স্ত্রীর নাম কী ছিল? ইউরোপের দীর্ঘতম নদী কোনটি? এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এরপর হতো হ্যান্ডব্যাগ টেস্ট! এই পরীক্ষা মোতাবেক ক্লদ মেয়েদের হাতব্যাগের ভেতরে থাকা কিছু সব ডেস্কে ফেলতেন। সেখানে অপছন্দনীয় কিছু পেলে, সাথে সাথে অকৃতকার্য ঘোষণা করা হতো। এরপর দাঁত, চুল, চোখ, ইত্যাদি পরীক্ষা করা হতো। কলা, দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেসব মেয়েকে জ্ঞান দেয়া হতো। শরীরের কোনো অংশ ক্লদের কাছে অপছন্দনীয় মনে হলে, তার জন্য একজন সার্জন প্রস্তুত থাকতেন। একজন পুরুষের চোখে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নারী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকল পতিতাকে সবরকম প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রয়োজনে রুক্ষ ও কঠোরও হতেন। নিজের পেশাদারিত্ব ছিল তার সব এবং এটা তিনি শতভাগ বজায় রাখতেন। তার অধীনে কাজ করা পতিতাদেরও এটা মেনে চলতে বাধ্য করতেন। ১৮ শতকে এমন একজন পেশাদার নারী পতিতালয় পরিচালক থাকাটা আসলেই দুরূহ ছিল! ট্যাক্স ফাঁকি সংক্রান্ত মামলায় বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন। তার সহযোগীদের মধ্যে কেউ এখন হলিউডের বিখ্যাত তারকার স্ত্রী, কেউবা শিল্পপতির ঘর করছেন। কিন্তু এখনও চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়ে মাদাম ক্লদে তাদের নাম প্রকাশ করেননি। মাদাম ক্লদের বয়স এখন ৯১ বছর।